The Journey from Coping with Infertility to Embracing Fatherhood

Male infertility as much common as it is can be alarming – but through IVF, one can live his dream of embracing fatherhood.

Read more in Bengali

লকডাউনের শুরুর দিকেই মা হয়েছে শ্রীময়ী। ডেলিভারির সময় কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছিল বলে বেশ কিছু দিন ছোট্ট বিহুকে নিয়ে নার্সিং হোমেই থাকতে হয়েছিল শ্রীময়ীকে। এ দিকে বিহুর আসার আনন্দে তো সারা বাড়িতে খুশির ঢেউ! অধীর আগ্রহে সবাই ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু শ্রীময়ীর মনে আনন্দ থাকলেও কোথাও যেন একটা কাঁটা খচখচ করছে। খালি মনে হচ্ছে, ওর স্বামী শ্রীদীপ্ত যেন  খুশি নয়!

কিন্তু শ্রীময়ীর সন্দেহের মেঘটা কেটে যায় সে দিনই, যে দিন ও বিহুকে নিয়ে বাড়িতে পা রাখে! ওদের জন্য মস্ত একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছিল শ্রীদীপ্তই। ছোট্ট বিহুর জন্য অন্দরসজ্জাই পাল্টে দিয়েছে তার বাবা। এত্ত এত্ত খেলনা, এত্ত জামাকাপড়— সব কিছু ছোট্ট পুতুলটার জন্য নিজে হাতে কিনেছে শ্রীদীপ্ত। এই সব কিছু দেখে আনন্দে কেঁদেই ফেলে শ্রীময়ী!

ওর মনে পড়ে যায় সেই দিনগুলোর কথা, যখন শ্রীদীপ্ত রাতের পর রাত ঘুমোত না। রাত জেগে পাগলের মতো নেট সার্চ করতো। কারণ সন্তান না আসার জন্য ফার্টিলিটি ক্লিনিকে গিয়ে একগাদা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওরা জানতে পেরেছিল যে,  শ্রীদীপ্ত কখনও বাবা হতে পারবে না। কারণ ওর সিমেনে পর্যাপ্ত স্পার্ম নেই! শ্রীদীপ্ত তো মেনেই নিতে পারেনি। এমনটাও আবার হয় নাকি? 

ডাক্তারবাবুই অনেক বুঝিয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, শ্রীময়ী-শ্রীদীপ্ত চাইলে ডোনারের স্পার্ম নিয়ে আইভিএফ করা যেতে পারে। এর পর বাড়ি ফিরে রীতিমতো গুগলে এই বিষয়টা নিয়ে পড়াশোনা করে শ্রীদীপ্ত। বেশ কয়েক দিন লাগে বিষয়টা মেনে নিতে। শেষ পর্যন্ত শ্রীময়ীর মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়েছিল সে। আসলে ওর মেল ইগোয় বড্ড ধাক্কা লেগেছিল। শ্রীময়ী বুঝতে পারত, এই সিদ্ধান্তটা মন থেকে নেয়নি শ্রীদীপ্ত। কিন্তু আজ বুঝল যে, বিহুকে মন থেকেই মেনে নিয়েছে ওর বাবা!

শুধু শ্রীদীপ্তই নয়, এমন সমস্যায় পড়েছেন বহু পুরুষই। তাঁদের ধারণা, পুরুষ মানুষ চাইলেই বাবা হতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ মহিলাদের মতো পুরুষদেরও বন্ধ্যত্বের সমস্যা হয়। আর এটা মেনে নিতে সমস্যা হয় পুরুষদের। তাদের মেল ইগোতে আঘাত লাগে। এর জন্য দায়ী আমাদের সমাজ! কারণ সন্তান জন্মানোয় কোনও সমস্যা হলে বরাবর আমাদের সমাজ একটা মেয়েকেই দোষারোপ করে এসেছে। কিন্তু সময় এসেছে এই ভুলটা ভাঙানোর! 

জেনে রাখুন, প্রায় ১৫% দম্পতি বন্ধ্যত্বের সমস্যায় ভোগেন। অর্থাৎ এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে কোনও দম্পতির মধ্যে  অসুরক্ষিত শারীরিক মিলন ঘটছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সন্তান আসছে না। তা হলে বুঝতে হবে যে, ওই দম্পতি বন্ধ্যত্বের সমস্যায় ভুগছেন। আর এর তিন ভাগের এক ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষদের সমস্যা দেখা যায়।

পুরুষদের বন্ধ্যত্ব আসলে কী? কম শুক্রাণু উৎপাদন, শুক্রাণুর অস্বাভাবিক রকম কার্যকলাপ অথবা শুক্রাণু তৈরিতে বাধা ইত্যাদি। কোনও অসুস্থতা, আঘাত-ক্ষত, জীবনযাত্রা বা লাইফস্টাইল— এগুলোই পুরুষ বন্ধ্যত্বে প্রভাব ফেলে। বহু চেষ্টার পরেও সন্তান না আসা খুবই হতাশাজনক, কিন্তু পুরুষ বন্ধ্যত্বের অনেক চিকিৎসাই আজকাল রয়েছে। ফলে এটা নিয়ে উদ্বেগর কোনও কারণ নেই।

পুরুষদের বন্ধ্যত্বের উপসর্গ:

পুরুষ বন্ধ্যত্বের প্রধান উপসর্গই হচ্ছে— সন্তান না আসা। তা ছাড়া সে রকম নির্দিষ্ট কোনও উপসর্গ নেই। তবে অনেকেই হয়তো এটা ছাড়া আর কোনও উপসর্গ সে ভাবে লক্ষ করেন না। কিছু কিছু উপসর্গও আছে, যা পুরুষদের বন্ধ্যত্বের ইঙ্গিত করে। সেগুলো হচ্ছে—

  • যৌনক্রিয়ায় সমস্যা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়— কম পরিমাণে বীর্যপাত, যৌনক্রিয়ায় অনীহা, লিঙ্গ শিথিলতা বা ইরেক্টাইল ডিসফাংশন প্রভৃতি।
  • শুক্রাশয় ও তার আশপাশে ব্যথা, ফুলে যাওয়া অথবা কোনও স্ফীতির উপস্থিতি।
  • বারবার হওয়া শ্বাসনালির সংক্রমণ।
  • গন্ধ অনুভব করতে না পারা।
  • অস্বাভাবিক রকম স্তনের বৃদ্ধি বা গাইনিকোম্যাস্টিয়া।
  • মুখ এবং দেহের লোম কমে যাওয়া, ক্রোমোসোমাল অথবা হরমোনাল অস্বাভাবিকতা।
  • স্বাভাবিকের থেকে স্পার্ম কাউন্ট কম থাকা।

পুরুষদের বন্ধ্যত্বের কারণ:

পুরুষদের ফার্টিলিটি জটিল একটা প্রক্রিয়া। আর এর কারণগুলোও একাধিক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যদি সন্তান আসতে হয়, তা হলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ঠিকঠাক থাকতে হবে।

  • আপনাকে সুস্থ শুক্রাণু উৎপাদন করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে বয়ঃসন্ধির সময় থেকে পুরুষদের জননাঙ্গ ঠিকঠাক ভাবে তৈরি হওয়া দরকার এবং তার বৃদ্ধিও ঠিকঠাক ভাবে হতে হবে। অন্তত পক্ষে যে কোনও একটা টেস্টিকলের ক্রিয়া ঠিক থাকতে হবে, আপনার দেহে টেস্টোস্টেরন তৈরি হতে হবে এবং স্পার্ম তৈরিতে দায়ী অন্যান্য হরমোনও সঠিক মাত্রায় নিঃসৃত হতে হবে।
  • শুক্রাশয়ে স্পার্ম তৈরি হয়। আর তা একটি সূক্ষ্ম টিউবের মাধ্যমে গিয়ে বীর্যের সঙ্গে মেশে এবং এর পর তা লিঙ্গ দিয়ে নির্গত হয়।
  • বীর্যের মধ্যে পর্যাপ্ত শুক্রাণু থাকতে হবে। যদি আপনার বীর্যে স্পার্ম কাউন্ট কম হয়, সে ক্ষেত্রে আপনার সঙ্গীর ডিম্বাণুর সঙ্গে আপনার শুক্রাণুর নিষিক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
  • শুক্রাণুর কার্যক্ষমতা ঠিকঠাক থাকতে হবে। আর সেই সঙ্গে শুক্রাণু যেন জায়গা বদল করতে সক্ষম হয়। তবে যদি শুক্রাণুর ক্রিয়াকলাপে অস্বাভাবিকতা থাকে, সে ক্ষেত্রে ওই শুক্রাণু কোনও ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করতে পারবে না।

মেডিক্যাল কারণ:

ভ্যারিকোসিল

পুরুষদের টেস্টিকলগুলি ধরে রাখার জন্য চামড়ার যে আলগা একটা থলি থাকে, তার মধ্যে থাকা শিরাগুলি যখন ফুলে যায়, সেই অবস্থাকেই ভ্যারিকোসিল বলে। পায়ে মাঝে মধ্যে যে ভ্যারিকোস ভেইন দেখা যায়, ভ্যারিকোসিলও ঠিক তাই। কম শুক্রাণু তৈরি এবং শুক্রাণুর মান পড়ে যাওয়া এই ভ্যারিকোসিলের ফল এবং যা থেকে পুরুষদের বন্ধ্যত্বের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

সংক্রমণ

কিছু ধরনের সংক্রমণ স্পার্ম তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটায়। আর কিছু কিছু সংক্রমণের ফলে স্থায়ী ভাবে টেস্টিকল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

অ্যান্টিবডি

এমন কিছু অ্যান্টিবডি আছে, যা শুক্রাণুকে আক্রমণ করতে পারে। এই অ্যান্টি-স্পার্ম অ্যান্টিবডিগুলি ইমিউন সিস্টেমেরই কোষ, যেগুলি স্পার্মকে ক্ষতিকর ভেবে ভুল করে। আর সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোকে নিষ্কাশন করে।

টিউমার

ক্যানসার এবং নন ম্যালিগন্যান্ট টিউমারগুলি সরাসরি পুরুষ জননাঙ্গের ক্ষতি করে। কিছু গ্রন্থি আছে, যেখান থেকে হরমোন নিঃসৃত হয়, যা জননে সাহায্য করে। যেমন- পিটুইটারি গ্রন্থি। এই গ্রন্থিই অনেক সময় টিউমারের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এর চিকিৎসায় সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন করা হলে তা পুরুষ বন্ধ্যত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

হরমোনের সমস্যা

হরমোনের ভারসাম্য না থাকলে ফার্টিলিটিতে তার প্রভাব পড়ে। কম টেস্টোস্টেরন এবং অন্যান্য হরমোনঘটিত সমস্যা বন্ধ্যত্বের অন্যতম কারণ।

স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রা ও অন্যান্য কারণ:

ড্রাগের ব্যবহার

পেশি এবং পেশির শক্তি বাড়ানোর জন্য অ্যানাবলিক স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যার প্রভাব পড়ে টেস্টিকলে। তার ফলে স্পার্মের উৎপাদন ও স্পার্মের মান কমতে থাকে। কোকেন অথবা গাঁজার মতো মাদক দ্রব্যও স্পার্মের মান ও স্পার্মের সংখ্যা কমিয়ে দেয়।

মদ্যপান

মদ্যপান বা অ্যালকোহল সেবন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। যার ফলে লিঙ্গ শিথিলতা বা ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের মতো সমস্যা দেখা যায়, সেই সঙ্গে স্পার্ম উৎপাদনও কমে যায়। অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে লিভারের যে সব রোগ হয়, তা অনেক সময় ফার্টিলিটি সমস্যারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ধূমপান

যে সব পুরুষ তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন বা ধূমপান করেন, তাঁদের স্পার্ম কাউন্ট উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায়। শুধু তা-ই নয়, যাঁরা সরাসরি ধূমপান করেন না, অথচ প্যাসিভ স্মোকার, তাঁদেরও

ঝুঁকি থাকে।

ডিপ্রেশন

গবেষণা বলছে, পুরুষ সঙ্গী যদি ডিপ্রেশন বা হতাশায় ভোগেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গিনীর কনসিভ করতে সমস্যা দেখা দেয়। সেই সঙ্গে পুরুষদের ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে লিবিডো কম থাকায় যৌনক্রিয়াতেও সমস্যা হয়।

ওজন

অতিরিক্ত ওজন বাড়লে বা ওবেসিটি থাকলেও তার প্রভাব ফার্টিলিটিতে পড়ে। কারণ এর জেরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে, যা সরাসরি স্পার্ম বা শুক্রাণুর উপর প্রভাব ফেলে।  যা পুরুষদের ফার্টিলিটি কমিয়ে দেয়।

এই সমস্যা রুখতে কী কী মেনে চলবেন?

যদিও কয়েক ধরনের পুরুষ বন্ধ্যত্ব আটকানো যায় না। তবে কিছু কিছু বিষয় এড়ানো গেলে কয়েক ক্ষেত্রে পুরুষ বন্ধ্যত্ব প্রতিরোধ করা যাবে।

  • ধূমপান করবেন না।
  • মদ্যপান বা অ্যালকোহল সেবন এড়িয়ে চলুন। মদ্যপান করলেও তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • দেহের ওজন কম রাখতে হবে।
  • স্ট্রেস নেওয়া কমিয়ে ফেলতে হবে।

কোনও পুরুষ যদি বন্ধ্যত্বের সম্মুখীন হন, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা রয়েছে। তবে তাতেও যদি সমস্যার সমাধান না হয়, সে ক্ষেত্রে ডোনারের থেকে স্পার্ম সংগ্রহ করে আইভিএফ অথবা আইইউআই পদ্ধতিতে সন্তানের জন্ম দেওয়া যায়।

Having a Child after Recovering from Cancer

Are you worried about conceiving after cancer treatment? Fertility preservation can be a good option for those wanting to become a mother post-recovery.

Read more in Bengali

বিয়ের দু’বছর পেরিয়ে যেতেই সন্তান নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিল বছর তিরিশের রিমিতা (নাম পরিবর্তিত)। কিন্তু তার বছর পেরোলেও কনসিভ করতে পারল না সে। তখনই বুঝেছিল, বন্ধ্যত্বের সমস্যার সম্মুখীন সে। এক ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে জানতে পারল, ওর সন্দেহ ভুল নয়। ডাক্তারবাবুর পরামর্শে শুরু হল চিকিৎসাও। ঠিকঠাকই চলছিল সব কিছু। তবে মাস সাতেক পরেই দেখা দিল আর এক সমস্যা। কারণ কয়েক দিন ধরেই স্তনে একটি মাংস পিণ্ড অনুভব করছিল রিমিতা। চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করায় সে। জানা যায়, স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত সে। অস্ত্রোপচারের পরে নিতে হবে কেমোথেরাপিও। এর পর থেকে নানা আশঙ্কা ঘুরপাক খেতে শুরু করে সদ্য বিবাহিতা ওই তরুণীর মনে। ক্যানসার চিকিৎসার পরে নিজে সুস্থ হলেও সন্তানধারণ কি করতে পারবে সে? এই আশঙ্কাটা দূর করলেন রিমিতার ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞই। তিনি জানালেন, উপায় আছে। ক্যানসার চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগে যদি রিমিতা ডিম্বাণু সংরক্ষণ করে রাখে, তা হলে নিজে সুস্থ হয়ে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে পারবে সে। পরে অবশ্য ক্যানসার জয় করে ফুটফুটে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছে রিমিতা।

বিয়ের বছর না ঘুরতেই যেন অন্ধকার নেমে এসেছিল বছর সাতাশের তথাগত আর ওর স্ত্রী ঋতজার জীবনে (নাম পরিবর্তিত)। বিয়ের ঠিক সাত মাসের মাথায় জানা যায়, তথাগত কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত। ডাক্তারবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, রোগটা প্রথম ধাপে রয়েছে বলে সুস্থ হয়ে যাবে তথাগত। তাতে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে তার স্ত্রী ও পরিবারের লোকেরা। তবে চিকিৎসা শুরু করার আগে ডাক্তারবাবু জানিয়েছেন যে, তথাগত আর বাবা হতে পারবে না। তবে ও যদি কোনও ফার্টিলিটি ক্লিনিকে ওর শুক্রাণু সংরক্ষণ করে রাখতে পারে, তা হলে তথাগত পিতৃত্বের স্বাদ পেতে পারে। তবে যা করার তা ক্যানসারের চিকিৎসা শুরুর আগেই করে ফেলতে হবে। অনেক ভেবে-চিন্তে রাজি হয়ে যায় ওই দম্পতি। এর পর তথাগত সুস্থ হয়ে যাওয়ার কয়েক বছর কাটলে ওরা সন্তান নেবে বলে ঠিক করে। তার পর কেটে গিয়েছে আরও কয়েক বছর। ওরা এখন এক সুস্থ কন্যা সন্তানের সুখী বাবা-মা।

নিশ্চয়ই ভাবছেন, কোনও রূপকথার গল্প পড়ছেন! একেবারেই না। রেশমি আর কৌশিকের গল্পটা রূপকথার মতো হলেও বাস্তব ঘটনা। শুধু এরাই দম্পতি নয়, আরও অনেক তরুণ-তরুণীও আছেন, যাঁরা ক্যানসারের মতো মারণ রোগকে হারিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন এবং সুস্থ সন্তানেরও জন্ম দিচ্ছেন।

এক পরিসংখ্যান বলছে, স্তন এবং জরায়ুর ক্যানসারে অক্রান্তদের মধ্যে কম বয়সিদের সংখ্যা বাড়ছে। ভারতে প্রতি বছরই বাড়ছে স্তন ক্যানসার রোগীর সংখ্যা। তবে তাতে থেমে থাকছে না কিছু। চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন অনেক উন্নত। তাই ক্যানসারের মতো ঘাতক রোগকে হারিয়ে অনেকেই মাতৃত্ব এবং পিতৃত্বের স্বাদ পাচ্ছেন। কী ভাবে। ক্যানসারের যে কোনও থেরাপিতে নষ্ট হয়ে যেতে পারে আপনার সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা। তার জন্যই প্রয়োজন ফার্টিলিটি সংরক্ষণ। মহিলাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় এই ফার্টিলিটি সংরক্ষণ করা হয় মাসিক চক্রের নির্দিষ্ট ধাপে।

বাবামা হওয়ার পথে ক্যানসার কী ভাবে বাধা হয়ে দাঁড়ায়:

কয়েকটি নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসার চিকিৎসা সন্তান উৎপাদন এবং সন্তান ধারণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যার প্রভাব অস্থায়ীও হতে পারে, আবার চিরস্থায়ীও হতে পারে। ক্যানসারের কোন স্টেজ অথবা কোন ধরনের ক্যানসার, তার উপরই নির্ভর করবে সন্তান উৎপাদন এবং সন্তান ধারণের বিষয়টা। এমনকী চিকিৎসা চলাকালীন রোগীর বয়সের উপরেও ফার্টিলিটি অনেকাংশে নির্ভরশীল। এ বার জেনে নেওয়া যাক ক্যানসার চিকিৎসা ও তার প্রভাব।

  • অস্ত্রোপচার বা সার্জারি

সার্জারির মাধ্যমে পুরুষদের শুক্রাশয় এবং মহিলাদের জরায়ু (ইউটেরাস) অথবা ডিম্বাশয় (ওভারি) বাদ চলে যায়, সে ক্ষেত্রে ফার্টিলিটির উপর প্রভাব পড়বে।

  • কেমোথেরাপি

কেমোথেরাপির ড্রাগ ও মাত্রার উপর নির্ভর করে ওই প্রভাব। যে সব ড্রাগে অ্যালকাইলেটিং উপাদান থাকে, সেগুলোই বেশি ক্ষতি করে। এ ছাড়াও সিসপ্লাটিন ড্রাগও মারাত্মক ক্ষতি করে। তবে যাঁদের কেমোথেরাপি চলে, তাঁদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বয়স্ক মহিলারা বন্ধ্যত্বের সমস্যায় আক্রান্ত হন।

  • রেডিয়েশন

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কেমোথেরাপির তুলনায় রেডিয়েশনে বেশি ক্ষতি হয়। কোথায় ও কতটা জায়গা জুড়ে রেডিয়েশন করা হচ্ছে এবং রেডিয়েশনের মাত্রা- এ সবের উপর নির্ভর করে ক্ষতির পরিমাণ। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, উচ্চ মাত্রায় রেডিয়েশন চললে তা ডিম্বাশয়ের কিছু ডিম্বাণু নষ্ট করে দেয়। এমনকি অনেক সময় সব ডিম্বাণুও শেষ করে দিতে পারে।

  • ক্যানসারের অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি

অনেক সময় কয়েক ধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রে হরমোনথেরাপি করা হয়। মহিলাদের স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। যার প্রভাব ফার্টিলিটির উপর পড়তে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের চিকিৎসা শেষ হলেই ফার্টিলিটি সংক্রান্ত সমস্যাও শেষ হয়ে যায়।

ক্যানসার চিকিৎসা শুরুর আগে মহিলাদের ফার্টিলিটি সংরক্ষণ:

মহিলাদের ক্ষেত্রে এমন সুযোগ অনেকটাই বেশি। জেনে নেওয়া যাক, মহিলাদের ক্ষেত্রে ফার্টিলিটি সংরক্ষণের দিকগুলি।

  • এমব্রায়ো ক্রায়োপ্রিজারভেশন

এ ক্ষেত্রে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু সংগ্রহ করে তা নিষিক্ত করা হয়। তাতে যে ভ্রূণটা তৈরি হয়, সেটা ফ্রিজ করে সংরক্ষণ করা হয়। যাতে ক্যানসার সেরে যাওয়ার পর ওই ভ্রূণ হবু মায়ের গর্ভে রোপণ করা যায়। গবেষণা বলছে, ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ ভাবে ভ্রূণ সংরক্ষণ সফল হয়।

  • ডিম্বাণু সংরক্ষণ

এ ক্ষেত্রে মহিলাদের অনিষিক্ত ডিম্বাণু সংগ্রহ করে তা নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়।

  • রেডিয়েশন শিল্ডিং

এ ক্ষেত্রে ডিম্বাশয় ঢাকা দিয়ে রাখা হয়। যাতে ডিম্বাশয়ের উপর রেডিয়েশনের প্রভাব কিছুটা হলেও কমানো যায়।

  • ওভারি বা ডিম্বাশয়ের জায়গা বদল

পেলভিক অংশে রেডিয়েশন দেওয়া হলে ওভারি বা ডিম্বাশয়ের জায়গা বদলে দেওয়া হয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। ক্যানসারের চিকিৎসা শেষ হলে আবার সার্জারি করে ডিম্বাশয় ঠিক জায়গায় ফিরিয়ে এনে কনসিভ করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে সব সময় ওভারিকে রেডিয়েশনের হাত থেকে বাঁচানো যায় না।

  • সার্ভিক্স বাদ দেওয়া

প্রথম স্টেজের সার্ভিক্যাল ক্যানসারের চিকিৎসায় সার্ভিক্সের ক্যানসার আক্রান্ত অংশের সঙ্গে বড় চোঙার মতো একটা অংশ বাদ দেওয়া হয়। তার পর সার্ভিক্স ও জরায়ুর বাকি অংশ সংরক্ষণ করা হয়।

ক্যানসার চিকিৎসা শুরুর আগে পুরুষদের ফার্টিলিটি সংরক্ষণ:

ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগে পুরুষরা যদি মনে করেন যে, ফার্টিলিটি সংরক্ষণ করবেন, তা হলে সেটা করতেই পারেন।

  • স্পার্ম ক্রায়োপ্রিজারভেশন

এ ক্ষেত্রে স্পার্ম বা শুক্রাণু কোনও স্পার্ম ব্যাঙ্কে অথবা ফার্টিলিটি ক্লিনিকে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। যাতে সেটা পরে ব্যবহার করা যায়। ওই শুক্রাণু নিম্ন তাপমাত্রায় রাখা হয় এবং বছরের পর বছর ও ভাবে সংরক্ষণ করা যায়।

  • রেডিয়েশন শিল্ডিং

রেডিয়েশনের মারাত্মক প্রভাব যাতে জননাঙ্গে না পড়ে, তার জন্য শুক্রাশয় ঢাকনার মতো উপাদান দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।

কখন এই বিষয়ে ভাববেন:

হয়তো আপনার ক্যানসার ধরা পড়েছে। আর তার চিকিৎসা শুরু হবে। সে ক্ষেত্রে আপনি যদি চান, নিজের ফার্টিলিটি প্রিজারভেশন বা ফার্টিলিটি সংরক্ষণ করবেন, তা হলে তা করতে পারবেন। এই বিষয়ে আপনাকে সাহায্য় করতে পারেন এক জন ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ। তিনি পুরোটা বুঝে আপনাকে পরীক্ষা করে সঠিক দিশা দেখাবেন এবং চিকিৎসা চলাকালীন তিনিই আপনাকে তার পরামর্শও নিতে হবে।