Can Thyroid Disorders Affect Your Chances of Conceiving?

Undiagnosed thyroid can affect pregnancy but once the underactive or overactive thyroid is under control, you should be able to conceive successfully.

Read more in Bengali

ivf-thyroid-blog

বহু চেষ্টার পরেও যখন সোমঋতা কনসিভ করতে পারছিল না, তখন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বেশ কিছু টেস্ট করিয়েছিল  ও। তাতে ধরা পড়ে, থাইরয়েডের সমস্য়া রয়েছে ওর। এই খবরটা শোনার পর থেকেই ভেঙে পড়েছিল বছর তিরিশের প্রাণোচ্ছল মেয়েটা। ভেবেছিল, কোনও দিনই হয়তো মা ডাকটা শোনা হবে না আর। কিন্তু ভুলটা ভেঙেছিলেন ডাক্তারবাবুই। জানিয়েছিলেন, থাইরয়েডের সমস্য়াতেও মা হওয়া যায়। তার জন্য় সঠিক চিকিৎসার মধ্য়ে থাকলেই হল। সেই সঙ্গে ডাক্তারবাবু এ-ও জানান যে, গোটা বিশ্বে প্রচুর মানুষ থাইরয়েডের সমস্য়ায় ভুগছেন। তার মধ্য়ে ভারতেই প্রায় ৪.২ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। আর আমাদের দেশে প্রতি ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্য়ে ১ জনের হাইপোথাইরয়েড রয়েছে। ফলে এটা নিয়ে চিন্তার সে রকম কোনও কারণ নেই। আর সোমঋতার থাইরয়েডের সমস্য়া আগেই ধরা পড়েছে বলে অসুবিধাও হবে না। নিয়মিত ওষুধপত্র খেয়ে ডাক্তারের পরামর্শ মতো চললে ওর মা হওয়ার সাধ খুব শিগগিরিই পূরণ হতে চলেছে।

থাইরয়েড কী:

আমাদের গলার সামনের দিকে রয়েছে এই থাইরয়েড গ্ল্য়ান্ড। দেখতে অনেকটা প্রজাপতির মতো। আসলে এটি একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি (গ্ল্য়ান্ড)। এর কাজ হল- আমাদের শরীরের মেটাবলিজমকে নিয়ন্ত্রণ করা। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে টি থ্রি এবং টি ফোর নামে দু’টি হরমোন ক্ষরণ হয়। আর আমাদের মস্তিষ্কের ভিতরে থাকা পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (টিএসএইচ), যা থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তে টি থ্রি, টি ফোর হরমোন বেশি মাত্রায় থাকলে টিএসএইচ-এর পরিমাণ কমে যায়। অর্থাৎ এই হরমোনগুলির নিঃসরণের হার কম-বেশি হলেই শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা যায়।

থাইরয়েড সমস্য়ার ধরন:

  • হাইপোথাইরয়েডিজম
  • হাইপারথাইরয়েডিজম
  • গয়টার
  • থাইরয়েড নডিউলস
  • থাইরয়েড ক্যানসার

হাইপোথাইরয়েডিজম

থাইরয়েড গ্ল্য়ান্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন উৎপন্ন না হলে, সেই অবস্থাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলা হয়। এর বেশ কিছু লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও অনেক সময়ই তা বোঝা যায় না। হাইপোথাইরয়েডিজমের উপসর্গগুলির মধ্য়ে অন্য়তম-

  • হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া
  • ক্লান্তি বা অবসাদ 
  • কোনও কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারা
  • শুষ্ক ত্বক
  • চুল ঝরে যাওয়া
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • শীত শীত ভাব
  • পেশি আর জয়েন্টে ব্যথা 
  • বিষণ্ণতা
  • অনিয়মিত ঋতুস্রাব

শুধু তা-ই নয়, পরিবারে কারও থাইরয়েডজনিত অসুখ থাকলেও এটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার সদ্যোজাত শিশুর থাইরয়েড গ্ল্যান্ড তৈরি না হলে কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম দেখা যায়। সময়ে চিকিৎসা না হলে শিশুর বুদ্ধির স্বাভাবিক বিকাশ হয় না। 

হাইপারথাইরয়েডিজম

হাইপারথাইরয়েডিজমের কারণটা ঠিক উল্টো। অর্থাৎ থাইরয়েড গ্ল্য়ান্ডে অতিরিক্ত পরিমাণে হরমোন উৎপন্ন হলে, সেই অবস্থাকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলা হবে। এর উপসর্গগুলো হল-

  • ওজন কমে যাওয়া 
  • গরম সহ্য করতে না পারা
  • হজমে সমস্যা
  • অল্পে হাঁপিয়ে ওঠা
  • বুক ধড়ফড় 
  • হাত-পা কাঁপা
  • দুশ্চিন্তা-অবসাদ
  • অতিরিক্ত ঘাম 

গয়টার

অনেক সময় থাইরয়েড গ্রন্থিটি অতিরিক্ত বড় হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে একে গয়টার বা গলগন্ড বলা হয়। যদিও গয়টারে সে ভাবে ব্য়থা হয় না। তবে তা অনেকটা বেড়ে গেলে কাশি হতে পারে। এমনকী খাবার গিলতে আর শ্বাস নিতেও সমস্য়া দেখা দেয়। গয়টারের প্রধান কারণ হল- খাদ্যাভ্য়াসে আয়োডিনের অভাব। সাধারণত গয়টারের মাপ, উপসর্গ ও কারণ দেখে চিকিৎসা করা হয়। ছোট গয়টারের ক্ষেত্রে সে রকম সমস্য়া হয় না। গয়টারের উপসর্গগুলির মধ্য়ে প্রধান-

  • গলার কাছটা ফুলে যাওয়া
  • গলায় অস্বস্তি ভাব
  • কাশি
  • গিলতে কষ্ট
  • শ্বাস নিতে কষ্ট

থাইরয়েড নডিউলস

থাইরয়েড গ্ল্য়ান্ডে অনেক সময় অস্বাভাবিক কোনও স্ফীতি অথবা দলা বা পিন্ড দেখা দেয়।  সেগুলোই নডিউলস। সব নডিউলস বোঝা যায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে নডিউলস অস্বাভাবিক বাড়লে তা বোঝা যায়। সে ক্ষেত্রে-

  • গলার কাছে ফোলা ভাব 
  • শ্বাসনালিতে চাপ দিলে যদি শ্বাসকষ্ট অথবা খাবার গিলতে সমস্য়া হয়
  • বহু ক্ষেত্রে আবার নডিউলস থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে থাইরক্সিন উৎপন্ন হয়।

অতিরিক্ত ওই থাইরক্সিনের প্রভাবে হাইপারথাইরয়েডিজমের উপসর্গও দেখা দেয়।

থাইরয়েড ক্য়ানসার

পুরুষ ও কমবয়সি মহিলাদের তুলনায় বয়স্ক মহিলারাই এই রোগে আক্রান্ত হন। আর পঞ্চান্ন বছরের নীচে এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায় খুবই কম সংখ্য়ক মানুষকে। থাইরয়েডে নির্দিষ্ট ধরনের কিছু কোষ থাকে, যা ক্য়ানসার আক্রান্ত। এই গোটা বিষয়টির উপরই নির্ভর করে থাইরয়েড ক্য়ানসারের ধরন।

থাইরয়েডের চিকিৎসা

শরীরে থাইরয়েডজনিত অসুবিধা রয়েছে কি না, তা বুঝতে বিভিন্ন রকম পরীক্ষা করা হয়। দেহে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। সাধারণত হাইপোথাইরয়েডিজমে টি থ্রি এবং টি ফোর কম হলে  টিএসএইচ- এর মাত্রা বেড়ে যায়। হাইপারথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে এর ঠিক উল্টো হয়। অর্থাৎ রক্তে টি থ্রি ও টি ফোরের মাত্রা বেড়ে যায় এবং টিএসএইচ হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কম হয়। হাইপো অথবা হাইপার থাইরয়েডিজম ধরা পড়লে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নির্দিষ্ট ডোজের ওষুধ খেতে হবে। প্রথমে তিন মাস অন্তর, তার পরে ছয় মাস অন্তর রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। রক্ত পরীক্ষা না করিয়ে ওষুধের ডোজ বদলানো যাবে না। তবে হাইপারথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে ওষুধে কাজ না করলে সার্জারি বা রেডিয়ো অ্যাক্টিভ আয়োডিনথেরাপি করা হয়।

আবার থাইরয়েড নডিউলস বা ওই ধরনের সমস্য়ার জন্য় ইমেজিং টেস্ট করা হয়। আলট্রাসাউন্ড টেস্ট করা হয় সে ক্ষেত্রে। তবে সেটা বিনাইন না ম্য়ালিগন্য়ান্ট- তা আলট্রা সাউন্ড টেস্টে বোঝা যাবে না।

গর্ভাবস্থা (প্রেগন্য়ান্সি) থাইরয়েড

গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন, অথচ সফল হচ্ছেন না। সে ক্ষেত্রে নীচে উল্লিখিত লক্ষণগুলি যদি শরীরে অনুভব করেন, তা হলে সময় নষ্ট না করে ডাক্তার দেখিয়ে অবশ্য়ই থাইরয়েড টেস্ট করান। 

যে যে বিষয়গুলো লক্ষ করবেন

  • পরিবারে কারওর থাইরয়েড থাকলে
  • ছয় মাস ধরে সন্তানলাভের চেষ্টা করেও ব্য়র্থ 
  • জয়েন্টে ব্যথা, পেশীর ব্যথা, চুল ঝরে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব, লিবিডো হ্রাস, হার্ট রেট হ্রাস 
  • অনিয়মিত মাসিক 
  • মাসিকের সময় গুরুতর ব্যথা অনুভব করেন
  • আগে গর্ভপাত হয়ে থাকলে
  • ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পেলে

থাইরয়েডে আক্রান্ত মহিলার কনসিভ করার ক্ষেত্রে যে সমস্য়াগুলি হতে পারে অথবা তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের উপর যে প্রভাবগুলি পড়তে পারে, সেগুলি হল

  • কনসিভ করতে অসুবিধা
  • থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা ঠিকঠাক না থাকলে গর্ভপাতের ঝুঁকি
  • গর্ভস্থ শিশুর শারীরিক-মানসিক বিকাশে বাধা
  • প্রি-এক্লাম্পশিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়
  • থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা অস্বাভাবিক হলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রসব হওয়ার সম্ভাবনা 

গর্ভাবস্থায় থাইরয়েডের ওষুধ কি নিরাপদ

গর্ভাবস্থায় থাইরয়েডের ওষুধ একেবারেই নিরাপদ। কারণ প্রেগন্য়ান্সির প্রথম তিন মাস ভ্রূণের বিকাশ নির্ভর করে মায়ের থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত  হরমোনের উপর। এই হরমোন গর্ভস্থ ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অংশ গ্রহণ করে। তাই শিশু যাতে মায়ের শরীর থেকে পর্যাপ্ত থাইরয়েড হরমোন পায়, সে দিকে নজর রাখা উচিত। কনসিভ করার পরে মায়ের শরীরে যে সব হরমোন উৎপাদনকারী গ্রন্থি শিশুর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ, তার মধ্যে থাইরয়েড অন্যতম। গর্ভধারণের প্রথম দিকে মায়ের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর চাহিদা মেটাতে বেশি থাইরয়েড হরমোন প্রয়োজন, গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এই হরমোনের চাহিদা প্রায় ৫০% বেড়ে যায় এবং থাইরয়েডের ঘাটতিজনিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতে ডাক্তারবাবুর কথা শুনে নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে।

এগুলো এড়াতে হলে সে ভাবেই প্ল্য়ানিং করতে হবে। কনসিভ করার আগে থাইরয়েড টেস্ট অবশ্য়ই করাতে হবে। আর আগে থেকে থাইরয়েডের সমস্য়া থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে নিয়মিত। আসলে থাইরয়েডজনিত সমস্য়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখলেই মা হতে সে রকম অসুবিধাই হয় না। তা হলে বুঝতেই পারছেন, থাইরয়েডের সমস্য়াকে লাগাম দিতে হলে একটু সচেতনতাই যথেষ্ট। ভয়ের কোনও কারণই নেই!