How Serious Is Gestational Diabetes?

During pregnancy, some women may be at risk of gestational diabetes. The condition raises blood sugar levels, possibly leading to certain complications.

Read more in Bengali

মহিলারা সাধারণত দুইভাবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। প্রথমটি গর্ভ সঞ্চারের আগে থেকেই ডায়াবেটিস, দ্বিতীয় গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস অনেক ক্ষেত্রেই সন্তান জন্মদানের পর সেরে যেতে পারে। পরবর্তীকালে এইসব মায়ের টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় মায়ের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী থাকে তাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলা হয়।

সকালে খালি পেটে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা ৬.১ মিলিমোল/লিটার (১১০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার) বা বেশী অথবা ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে ৭.৮ মিলিমোল/লিটার (১৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার) বা তার বেশী হলে সেটিকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হিসেবে সনাক্ত করা হয়।

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগের সাথে আমরা কম-বেশি পরিচিত। কিন্তু গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি এবং এর জটিলতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। এ ব্যাপারে আমার কিছু অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছি:

মিসেস পৃথা মুখার্জী, বয়স ৩৭ বছর। প্রথম সন্তান জন্মের আট বছর পর পুনরায় গর্ভধারণ করেছেন, কিন্তু প্রথমবারের মতো চেকআপে এলেন সাড়ে সাত মাস গর্ভাবস্থায় (৩২ সপ্তাহ), পেট অস্বাভাবিক বড় হয়ে যাচ্ছে। প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যাই হয়নি তার তাই এবারো গর্ভাবস্থায় শুরুর থেকে কোনো ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন মনে করেননি তিনি। ডাক্তারের কথায় পরীক্ষা করে দেখা গেল রক্তে সুগার খালি পেটে ১৩ (13 mmol/L) ও খাবার গ্রহণের পর ২৬ (26 mmol/L); যা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকেই সাধারণত হয়ে থাকে। আল্ট্রাসনোগ্রামে দেখা গেল যে সন্তানের জলের  (Amniotic fluid) পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। সাথে সাথেই দক্ষিণ কলকাতার এক হাসপাতালে ভর্তি হলেন. সেখানেই ইনসুলিনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা হলো|

একই ধরনের অন্য একজন রোগীর – সুনীতি সেন – সন্তান ডেলিভারির পর দেখা গেল, তার বাচ্চার দুধপান বা কান্নার সময় নীল হয়ে যায়। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেল সন্তানের হার্টে একটি ফুটো। এটির একটি মূল কারণ হলো বাচ্চার মায়ের প্রথম তিন মাস অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস|

উপরোক্ত ঘটনাগুলি আপনাদের সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্য হলো ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি। বিশেষত গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে কোনোভাবেই অবহেলা করবেন না। সাথে এটাও বলি যে –  যার কখনোই ডায়াবেটিস ছিল না, তারও গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কাদের বেশি?

তুলনামূলকভাবে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তাদের যাদের:
১. পারিবারে যদি কারুর ডায়াবেটিস থাকে তাদের (মা-বাবা, ভাই-বোন, দাদু-দিদা)
২. আগে অধিক ওজনের (চার কেজি বা বেশি) সন্তান অথবা ত্রুটিযুক্ত সন্তান জন্মদানের ইতিহাস থাকলে
৩. অজ্ঞাত কারণে পেটে অথবা জন্মের পরপরই সন্তান মারা যাওয়ার ইতিহাস থাকলে
৪. বারবার সন্তান নষ্ট হওয়ার (অ্যাবরশন) ইতিহাস থাকলে
৫. গর্ভাবস্থায় সন্তানের জলের পরিমাণ (অ্যামনিয়াটিক ফ্লুইড) অতিরিক্ত হলে
৭. বয়স ৩০ বছরের বেশি বা শরীরের ওজন অতিরিক্ত হলে
৮. পূর্ববর্তী গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে।

ডায়াবেটিসে মা গর্ভস্থ শিশুর সম্ভাব্য জটিলতা
১. অ্যাবরশন বা প্রথম তিন-চার মাসের মধ্যেই সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়া
২. রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে প্রি-একলাম্পসিয়া বা অন্যান্য জটিলতা
৩. ঘন ঘন ইনফেকশন হওয়া ও তার কারণে সময়ের আগে জল ভেঙে যাওয়া
৪. সন্তানের ওজন বেশি হওয়ায় ডেলিভারির জটিলতা
৫. ডেলিভারি-পরবর্তী ইনফেকশন, সন্তান পর্যাপ্ত দুধ না পাওয়া, ইত্যাদি।

গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিসের লক্ষণ

গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিসের এরম কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষণ নেই যা দেখে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে। সাধারণত ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভকালীন চেকআপে যখন রক্তের গ্লুকোজ মাপা হয় তখনই ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়। কিন্তু আপনার ডাক্তার যদি মনে করেন আপনার ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি আছে তাহলে প্রথম চেকআপেই ডায়াবেটিস পরিক্ষা করার কথা বলতে পারেন। তবে কয়েকটি কারণ শনাক্ত করা হয়েছে যেই কারণে গর্ভকালীন সময় ডায়াবেটিস হতে পারে-

  • বার বার তৃষ্ণা পাওয়া
  • চোখে ঝাপসা দেখা
  • অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া
  • অস্বাভাবিক ক্লান্তি
  • ঘনঘন যোনিমুখে থ্রাশ বা ইস্ট ইনফেকশন হওয়া

তবে এই লক্ষণগুলি বেশিরভাগ গর্ভবতী নারীদের অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। তাই আপনার গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস হয়েছে কি না জানার একটাই উপায় – রুটিন ব্লাড গ্লুকোজ টেস্ট। গর্ভাধারণের পর প্রথম চেকআপে এই টেস্ট করা উচিত এবং গর্ভের ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহে পুনরায় করা প্রয়োজন।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের চিকিৎসা

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে তা শুরুর থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি কেননা, নিয়ন্ত্রণ না হলে অনেক ক্ষেত্রে সেটি জটিল আকার ধারণ করে।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়েদের এমন খাবার দিতে হবে যা তাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। খাবারের পুষ্টিগুণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিয়ম মাফিক খাদ্য গ্রহণ অতিঅবশ্যিক প্রয়োজনীয়।

যদি হাঁটতে কোনো নিষেধ না থাকে তবে হবু মাকে হাঁটার পরামর্শ দেওয়া হয়। অনেকেi মনে করেন, গর্ভকালীন হাঁটাহাঁটি করা যায় না। কিন্তু জটিলতা না থাকলে, আধা ঘণ্টা হাঁটতে পারেন তিনি।

এর মাধ্যমে মায়ের শরীর গর্ভধারণের জন্য তৈরী হয়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাও নিয়ন্ত্রিত থাকে। আর তাতেও যদি না হয়, তখন ইন্সুলিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়েদের অবশ্যই একজন গাইনোকোলজিস্টের ফলোআপে থাকতে হবে। আর গাইনোকোলজিস্ট যদি একা না পারে, তবে এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট বা ডায়বেটোলজিস্টের কাছেও যেতে হবে।

জন্মের পরপরই এবং প্রতি ১ ঘন্টা পর পর বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিৎ কারণ বুকের দুধ শিশুর রক্তে গ্লুকোজের সঠিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে আর সাথে সাথেই  রক্তে গ্লুকোজ পরিমাণমতো না থাকায় যেসব সমস্যা হয় তা থেকে বাঁচায়।

জটিলতা এড়াতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখবেন:

১. পরিকল্পিত গর্ভধারণ ও গর্ভধারণের আগে প্রি-কনস্পেশন কাউন্সেলিং অর্থাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া 

২. মাসিক বন্ধ হলে দ্রুত গর্ভাবস্থা নির্ণয়ের পরীক্ষা করা

৩. গর্ভাবস্থা নির্ণয়ের পরপরই নিয়মিত চেকআপে থাকা

৪. ডায়াবেটিস ধরা পড়লে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ডায়েট প্ল্যানিং এবং প্রয়োজনে নিয়মিত ইনসুলিন নেওয়া 

৫. ইনসুলিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে নিয়মিত রক্তের সুগার চেক করা

৬. গর্ভাবস্থায় ও পরবর্তী জটিলতা সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং যেকোনো সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।

সব শেষে বলি, ডায়াবেটিস একটি জটিল কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে মা ও সন্তানের জটিলতা অনেকাংশে কমানো সম্ভব।