Unable to Conceive? Could be TB!

Genital Tuberculosis can affect the fallopian tubes, thereby causing infertility. Identifying the symptoms and getting tested can help with treatment.

Read more in Bengali

ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল শ্রীকন্যার বিয়ের ঠিক দু’বছরের মাথায়। কনসিভ করতে চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল ও। এ দিকে মাঝে মধ্যেই পেটে হালকা হালকা ব্যথা অনুভব করছিল। সঙ্গে চলছিল অনিয়মিত ঋতুস্রাব আর বুকে ব্যথাও। তবে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর তিনি যা বললেন, তা শুনে রীতিমতো আকাশ ভেঙে পড়ল বছর আঠাশের মেয়েটির মাথায়! ডাক্তারবাবু জানিয়েছিলেন, জেনিটাল টিউবারকিউলোসিস (টিবি)-এ আক্রান্ত ও। ডাক্তারবাবু শ্রীকন্যাকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে বলেছিলেন। তাতে জানা যায়, ও কখনও কনসিভ করতে পারবে না। কারণ প্রথম থেকে শ্রীকন্যা এই সমস্যাকে সে ভাবে গুরুত্ব দেয়নি। ফলে সময়মতো চিকিৎসাও হয়নি। জটিলতা এড়াতে ডাক্তারবাবু কিছু ওষুধ চালু করেছিলেন। কিন্তু মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল শ্রীকন্যা।

শুনে নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন! ভাবছেন, জেনিটাল টিবি আবার কী? কারণ এত দিন আমরা জেনে এসেছি যে, টিবি মানেই কাশি আর শ্লেষ্মার সঙ্গে রক্ত উঠছে। ফুসফুসে টিবি বা যক্ষ্মা বা পালমোনারি টিউবারকিউলোসিসের ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে। তবে টিবি বা যক্ষ্মা কিন্তু দেহের অন্যান্য অঙ্গেও হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, এই জেনিটাল টিবি কিন্তু মাথাব্যথার একটা বড় কারণ হিসেবে গণ্য হয়। কারণ এর তেমন কোনও লক্ষণ চোখে পড়ে না। কিন্তু জননতন্ত্রকে নষ্ট করতে থাকে। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন, এই ধরনের যক্ষ্মা কিন্তু বন্ধ্যাত্বের একটা বড় কারণ, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে।

সাম্প্রতিক এক সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, যে সব মহিলারা আইভিএফ চাইছেন, তাঁদের ২৫ শতাংশেরই জেনিটাল টিবি রয়েছে। আবার ফ্যালোপিয়ান টিউবের সমস্যার জেরে যে সব মহিলারা বন্ধ্যাত্বের সম্মুখীন হয়েছেন, তাঁদের ৫০ শতাংশেরই জেনিটাল টিবি আছে বলে ওই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে। ডাক্তারদের মতে, ১৫ থেকে ৪০ বছর বয়সি মহিলাদেরই এই জেনিটাল টিউবারকিউলোসিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। আবার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) ২০১৮ সালে এই বিষয়ে একটি গবেষণায় চালিয়েছে। তাতে জানা গিয়েছে, ভারতে আইভিএফ-এর জন্য আসা মহিলাদের ৫০ শতাংশেরও বেশি জনের জেনিটাল টিবি রয়েছে।

জেনিটাল টিউবারকিউলোসিস (টিবি) কী?

প্রথমেই জানিয়ে দেওয়া ভাল যে, টিবি একেবারেই ছোঁয়াচে রোগ নয়। আসলে মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস (Mtb) ব্যাকটেরিয়া থেকে টিবি হয়। প্রতি দিন সারা বিশ্বে প্রায় ৪৪০০ জন এই ঘাতক ব্যাকটেরিয়ার শিকার হয়। টিবি ব্যাকটেরিয়া প্রাথমিক ভাবে ফুসফুসকে আক্রমণ করে। তার পরে তা জরায়ু আর ফ্যালোপিয়ান টিউবে ছড়িয়ে পড়ে এবং সংক্রমণও ঘটায়। এই ব্যাকটেরিয়া জরায়ুতে আক্রমণ করলে ইউটেরাইন টিউবারকিউলোসিস (যা পেলভিক টিবি নামেও পরিচিত) হয়। যার ফলে প্রেগন্যান্সির সম্ভাবনা কমে। শুধু মহিলারাই জেনিটাল টিবি-তে আক্রান্ত হন না, পুরুষদের জননাঙ্গেও টিবি ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু কী ভাবে ছড়ায় এই ব্যাকটেরিয়া? ড্রপলেট ইনফেকশনের মাধ্যমে টিবি ব্যাকটেরিয়া শ্বাসনালি থেকে ধমনি দিয়ে যে ভাবে বুকের মধ্যে চলে যায়, ঠিক সে ভাবেই বুকের বদলে তা মহিলা ও পুরুষের জননাঙ্গে পৌঁছে যায়। তবে হ্যাঁ, এটা কখনই সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড সংক্রমণ নয়।

জেনিটাল টিবি উপসর্গ:

দেহের অন্যান্য অঙ্গে টিবি বা যক্ষ্মা হলে তা-ও বোঝা যায়, কিন্তু জেনিটাল টিবি-র লক্ষণগুলো সে ভাবে চোখে পড়ে না। তা হলে এটা বোঝা যাবে কী করে? তাই কিছু কিছু উপসর্গ দেখলে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিতে ভুলবেন না। মহিলাদের ক্ষেত্রে সেই উপসর্গগুলো হল-

  • অনিয়মিত মাসিক
  • পেট ব্যথা
  • ক্রমাগত স্রাব (কখনও রক্ত থাকতে পারে আবার কখনও কখনও রক্ত থাকেও না
  • সঙ্গমের পর রক্তপাত

এ ছাড়া, যাঁরা বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা করাচ্ছেন, তাঁদের যদি ওষুধ দিয়েও ফল না হয়, তা হলে পরীক্ষা করে বুঝতে হবে, টিবি রয়েছে কি না।

জেনিটাল টিবি প্রভাব:

প্রথম স্তরে মহিলাদের জেনিটাল টিবি-র চিকিৎসা না হলে এটা ফ্যালোপিয়ান টিউবকেই নষ্ট করে দিতে পারে। জটিলতা বাড়লে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। এই টিবি-র ক্ষেত্রে জরায়ুর আস্তরণ এতটাই পাতলা হয়ে যায় যে, গর্ভপাতও হয়ে যেতে পারে। শুধু তা-ই নয়, এর থেকে বন্ধ্যাত্বও আসতে পারে।

রোগ নির্ণয়:

এই রোগে আক্রান্ত কি না, তা বোঝার ভাল উপায় হল- ঋতুস্রাবের সময় যে রক্ত শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, সেই রক্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা। এই রোগ নির্ণয়ের আরও ভাল একটি উপায় রয়েছে। সেটি হল- ঋতুস্রাব শুরুর ৭ দিন আগে ক্লিনিকে ডেকে হিস্টেরোস্কোপি করে এন্ডোমেট্রিয়াল টিবি কালচার করা। যদিও এর ফল পেতে একটু সময় লাগে। তা ছাড়া, টিবি পিসিআর পদ্ধতিও প্রয়োগ করা হয়। আবার আধুনিক চিকিৎসার ব্যাকটেক কালচার জেনিটাল টিবি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বেশ বিশ্বাসযোগ্য।

তবে হ্যাঁ, এই জেনিটাল টিবি থাকা সত্ত্বেও মহিলাই মা হতে পেরেছেন, এমন নজিরও রয়েছে। নিউ ইংল্যান্ডের এক মহিলারই তো জেনিটাল টিবি ছিল। এক বছর ধরে তিনি চিকিৎসা ও অ্যান্টিবায়োটিকের উপর ছিলেন। তার পরেও আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে সুস্থ বাচ্চার জন্ম দিয়েছেন ওই মহিলা।